গত ১৩ই ফ্রেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার ১২টা থেকে বিকেল ৩:৩০ পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডি সি-তে হোয়াইট হাউজ সংলগ্ন লাফায়েৎ স্কোয়ারে ইউনাইটেড হিন্দুজ অফ ইউএসএ’র উদ্যোগে ড. ইউনূস সরকারের প্রশ্রয়ে দেশে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সহ সকল কারারুদ্ধ সংখ্যালঘু প্রতিবাদীদের অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ইউনাইটেড হিন্দুজ অফ ইউ. এস. এ.’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ভবতোষ মিত্র ও বাংলাদেশি আমেরিকান রিপাবলিকান এলায়েন্সের সদস্য সচিব এবং মানবাধিকার নেতা প্রিয়তোষ সাহার যৌথ পরিচালনায অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বেদান্ত এসাসিয়েশন অফ নিউ ইয়র্ক, মহামায়া মন্দির, হিন্দু কোয়ালিশন, সনাতনী গীতা সোসাইটি সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু ধর্মীয় সংগঠন ও মন্দির নিজ নিজ ব্যানার নিয়ে যোগ দেয়। বিপুল সংখ্যক লোক এবং দেশি বিদেশি সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চেনেলের উপস্থিতিতে তিন ঘন্টারও বেশি স্থায়ীউক্ত সভায় জন্মভূমিতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে বিপন্ন আত্মীয় স্বজনের করুণ অবস্থার বর্ণনা করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সহ বিশ্বের সকল সভ্য গনতান্ত্রিক দেশেসমূহের প্রতি কার্যকরী পদক্ষপে গ্রহনের জন্য আবেদন জানান। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড হিন্দুজ অফ ইউ. এস. এ.’র চেয়ারম্যান ডা: প্রভাত দাস,
বিদ্যুৎ সরকার, ড. দিলীপ নাথ, প্রিয়া সাহা, রমেশ নাথ, অজিত চন্দ, নিতাই দেবনাথ, দীনেশ মজুমদার, আশীস ভৌমিক, শিবু চৌধুরী, শুভ রায়, সমর রায়, প্রতাপ সরকার, হেমন্ত পাল বেদান্ত সোসাইটির সভাপতি অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস, সন্তোষ নাথ, সদানন্দ হালদার প্রমুখ।
সুপরিকল্পিতভাবে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধ করতে এবং সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের ব্যাপারে ড. ইউনুস সরকারের অনীহার বিষযে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন যে, দেশের সকল নাগরিককে নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব ড. ইউনূস এবং সেনাবাহিনীর; অথচ, ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট থেকে অব্যাহত সামপ্রদায়িক নির্যাতন, খুন, ধর্ষণের ঘটনাবলীকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাজনিত বলে মিথ্যা দাবি করে দায়িত্ব এড়িযে যাচ্ছেন। বিদ্ধস্ত দশটি উপাসনালয়ের নয়টি সংখ্যাগরীষ্ঠদের হলেই কেবর এমন দাবি করা চরে বলে, বক্তারা সরকার ও সেনাবহিনীর এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেন। তাঁরা উল্লেখ করেন যে, বর্তমান সরকারের আমলে ১৩৬ টির উপর সংগঠন সভা সমাবেশ করে তাদের দাবিদাওয়া জানিয়েছে এবং সরকার সেগুলো মেনেও নিয়েছে বা মানা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু সংখ্যালঘু সম্পদায় তাদের ন্যায্য দাবিদাওয়া জানালে তাঁদের নেতা ইসকনের শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে শুধু কারারুদ্ধ করে রেখেছে যাতে তাঁরা আর প্রতিবাদ সমাবেশ করার দু:সাহস না করে। তা’ছাড়া, অতীতে যেমন কোন সরকারই সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের আনেনি এবং কখনও কখনও সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পাঠিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন করেছে— যেমন, ১৯৯২ সালের ১০ই এপ্রিল লোগাং ম্যাসাকার-- ঠিক তেমনি ইউনূস সরকারও সেটা করছে, যার নমুনা চট্টগ্রামের হাজারি গলির নির্যাতণের ভয়াবহ ঘটনা। বক্তারা বলেন যে, যদিও ড. ইউনুস সাহেব এবং ওনার সহযোগী এ্যাডভাইজাররা দাবি করে চলেছেন যে তাঁরা ‘‘বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, সমতা-ভিত্তিক সমাজ’’ গড়ার লক্ষ্যে ‘‘অন্তর্ভুক্তিমূলক” রাজনৈতিক পরিবেশ গড়তে তাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের আচরণে উক্ত প্রতিশ্রুতির মোটেও কোন প্রতিফলন নেই; তাঁরা আসলে সংবিধান সংস্কারের নামে রাষ্ট্রধর্ম-ইসলাম বহাল রেখে, সেকুলার ডেমোক্র্যাসি বাদ দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সবকিছু নিশ্চিহ্ণ করে দিয়ে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরো ইতিহাসটাই মুছে ফেলে, আই. এস.-বাংলা ও আল কায়দার বাংলাদেশী শাখার জঙ্গী নেতা এবং জামাত-শিবির সহ সকল ধর্মীয় উগ্রপন্থী ১৯৭১-এর গণহত্যার ঘাতকদের মুক্তি দিয়ে, সরকার, সমাজ ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে, ভাষা-ভিত্তিক বাঙালী জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে নতুন “মুসলিম বাঙালি” জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করে, বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মত একটি ভয়ঙ্কর ইসলামী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার প্রস্ততি সম্পন্ন করছে।
কয়েকজন বক্তা বলেন যে, গত ৫ই আগষ্টের পর থেকে এ’ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও দোকানপাট লুটপাট, উচ্ছেদ, বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি সংযোগ, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ ও খুন, ও পাইকারি হারে চাকরি্চ্যুত করে, জামাতে ইসলামের সদস্য হতে বাধ্য করে, দেশে ছেড়ে যেতে বাধ্য করছে। এ’সব সামপ্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা পাকিস্তানী আমলের মত।
কয়েকজন বক্তা বলেন যে, যেহেতু, শেখ হাসিনা সরকার সহ অতীতের সকল সরকারর মতই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সংখ্যালঘু নির্যাতকের বিচারও করেনি, তাই সংখ্যালঘুদের জন্য অবিলম্বে পূর্ব তিমূরের মত একটি আলাদা আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ, অথবা জাতিসংঘের তত্বাবধানে ভারত-বাংলাদেশে-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিদেশীয় জনবিনিময় করা উচিৎ, যে কাজটা ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ আগষ্টেই করা উচিৎ ছিল। অন্যান্য বক্তারা বলেন যে, অবিলম্বে সেপারেট ইলেক্টরেট প্রতিষ্ঠা করা হোক, এবং দেশের সংখ্যালঘু ঘন-বসতিপূর্ণ এলাকায় কয়েকটি নিরাপদ সংখ্যালঘু জনপদ সৃষ্টি করা হোক, যেখানে পুলিশ ও প্রশাসন সংখ্যালঘুদের হাতে ন্যাস্ত করতে হবে, এবং “নিরাপদ সংখ্যালঘু জনপদ” ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন হওয়া চাই। এই বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দিতে গিযে তাঁরা বলেন যে, ভারতের মুসলমানরা নির্যাতিত না হয়েই যদি আলাদা ইলেক্টরেট এমনকি একটি স্বাধীন দেশ পেতে পারেন এবং সেটা যদি সঠিক কাজ হয়ে থাকে, তা’হলে বাংলাদেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের এমন দাবি খুবই স্বাভাবিক এবং ডক্টর ইউনূস সরকার ও অন্তর্জাতিক সমপ্রদাযের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে।
-খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির
Publisher & Editor